ঐক্য ও সংহতি অটুট রাখতে হবে
২১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম
অভ্যুত্থানের অন্যতম মাষ্টারমাইন্ড ও উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের সাম্প্রতিক বক্তব্যটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে এবং এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও বিচার বিশ্লেষণ চলছে। ঘটমান বাস্তবতার আলোকে তিনি লিখেছেন, ‘পুরানো বন্দোবস্তের প্রতি দাসখত লিখে দেয়া লোকেরা আবারো ঐক্যবদ্ধ হবে। এ দল, ঐ দল এখানে মুখ্য নয়। মুখ্য হল পুরাতন প্রজন্ম ও বন্দোবস্ত। ছাত্র-তরুণদের জন্য একটি সুযোগ এসেছে। প্রতিটি প্রজন্মের কাছেই এরকম একটি সুযোগ আসে। ‘৯০ এর ছাত্র-তরুণ খরচ হয়ে গেছে আগেকার প্রজন্মের ধূর্তামির কাছে।আবারো সে ধূর্ত পুরাতনপন্থীরা ছাত্র-তরুণদের মধ্যে যে বিভেদ ও অনাস্থা তৈরি করছেন, সে সম্বন্ধে ছাত্র-তরুণেরা সতর্ক না থাকলে তারা প্রজন্ম আকারে হত্যা যোগ্য হয়ে উঠবেন। কারণ, ‘৯০ এত রক্তাক্ত এবং কনফ্রন্টেশনাল ছিল না। এখানে প্রায় অর্ধলক্ষ আহত, মানে মাঠের লড়াকু আছেন। দু’হাজার বা ততোর্ধ্ব শহীদ আছেন। গৃহযুদ্ধের পূর্ববর্তী মুহূর্তে একটা ‘সামাল দেয়ার’ প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে, যা এখনো চলমান। কিন্তু, এ যুদ্ধ তো হবেই কোন না কোন ফর্মেটে। মৃত্যু আমাদের ছুঁয়ে গেছে, আমরা জ্যান্তমরা হয়ে গেছি। আমাদের শহিদ হয়ে যাওয়া ভাই বোনের সাক্ষ্যকে নিরন্তর পুনরাবৃত্তি করে যেতেই হবে। ক্লান্ত হইয়েন না, জড়ো হোন, ঘন হয়ে বসুন।’ মাহফুজ আলমের এই বক্তব্য একজন বিপ্লবী তরুণের সংকল্প, আবেগ ও আশঙ্কার বার্তাবহ। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতন ও ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অর্ন্তবর্তী সরকার এ দেশের মানুষের ৫৩ বছরের গণতান্ত্রিক স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কারের দায়িত্ব নিয়েছে। অর্ন্তবর্তী সরকার প্রথম ১০০ দিনের গন্ডি পেরিয়ে আসার পর এই সরকারের কর্মকান্ড ও সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে নানামুখী মূল্যায়ণ চলছে। ভুলে গেলে চলবে না, ১৬ বছর ধরে জাতির ঘাড়ের উপর দৈত্যাকার জগদ্দল পাথরের মত চেপে বসা মাফিয়া সরকারের দোসররা এক মুহূর্তের জন্যও বসে নেই। ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত বিপ্লব ও আত্মদানকে ব্যর্থ করে দিয়ে তারা নতুন খোলসে ফিরে আসতে মরিয়া হয়ে নানা ধরণের অপতৎপরতা চালাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাঁধা হচ্ছে, ছাত্র-জনতার ঐক্য।
আওয়ামী লীগ ও তার ক্ষুদ্র সহযোগী দলগুলোর বাইরে দেশের ৯০ শতাংশের বেশি মানুষের প্রতিনিধিত্বশীল রাজনৈতিক দলগুলোর ফ্যাসিবাদ বিরোধী ঐক্যের মধ্য দিয়ে যে বিজয় অর্জিত হয়েছিলো, তা নস্যাৎ করতে তাদের মধ্যে বিভেদ ও অর্ন্তকলহ সৃষ্টির মধ্য দিয়েই তা সম্ভব হতে পারে। অর্ন্তবর্তী সরকারের পারফর্মেন্স, সংস্কার ও নির্বাচনের প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে প্রয়োজনীয় বোঝাপড়া ও সমন্বয় না থাকলে যে ভুল বুঝাবুঝি ও সংকট দেখা দিতে পারে, তার কিছুটা আলামত ইতিমধ্যেই দেখা যাচ্ছে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা ও উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এবং ছাত্র সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহর সাম্প্রতিক বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর এ নিয়ে নানা জল্পনা ও বিচার-বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে। একদিকে নানা ক্ষেত্রে সরকারের কাছে জনপ্রত্যাশা ও চ্যালেঞ্জসমুহ দ্রুত সমাধানের চাপ অন্যদিকে অত্যাবশ্যকীয় সংস্কার ও দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষনার রাজনৈতিক চাপ অর্ন্তবর্তী সরকারকে চাপে ফেলেছে। একটি অরাজনৈতিক অর্ন্তবর্তী সরকারের ম্যান্ডেট ও শক্তির মূল উৎস বিপ্লবী ছাত্র-জনতা এবং স্বৈরাচার বিরোধী রাজনৈতিক দল। সেখানে যদি শর্ষের ভেতর ভুতের আলামত দেখা যায়, তাহলে ভুত তাড়ানোর গতানুগতিক পন্থা কোনো কাজে আসে না। পুরনো রাজনৈতিক বন্দোবস্ত যদি পরস্পর হাত মিলিয়ে সংস্কার ও বিপ্লবের প্রত্যাশাকে ব্যর্থ করে দিতে চায়, তাহলে বিপ্লবী ছাত্র-জনতা আবারো রাজপথে যুদ্ধ করে, জীবন দিয়ে প্রত্যাশা পুরণে শপথ নেয়ার কথা বলছেন মাহফুজ ও হাসনাতরা। তাদের এই আবেগ, আশঙ্কা ও সংকল্পের সাথে ছাত্র-জনতা এবং দেশের সাধারণ মানুষের সমর্থন এখনো অটুট রয়েছে। অর্ন্তবর্তী সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতার উপর আগামী সংগ্রামের প্রকৃতি ও তীব্রতা অনেকাংশে নির্ভর করছে। রাজনৈতিক পক্ষগুলো পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের প্রতি নমনীয় ও আপসকামী হলেও তা সফল হওয়ার নয়। ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়া এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে হাসিনার মন্ত্রী-এমপি, আমলা-বিচারকদের প্রসিকিউশন শুরুর মধ্য দিয়ে সেই বার্তা স্পষ্ট হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চীফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম আন্তরিক প্রচেষ্টা ও কর্মদক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন। আয়নাঘরের কুশীলব সামরিক-বেসামরিক ২২ শীর্ষ কর্মকর্তার ২২ পাসপোর্ট বাতিলসহ বিচারের সম্মুখীন করার কাজও দ্রুত এগিয়ে চলছে, এটা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। অন্যদিকে বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা, পুলিশ বাহিনীর নিস্ক্রিয়তা এখনো জনদুর্ভোগ, বিশৃঙ্খলা ও সরকারের প্রতি এক প্রকার অনাস্থা সৃষ্টির ইন্ধন যোগাচ্ছে।
সংস্কার কমিশনগুলোর কাজ এগিয়ে চলেছে। গুম-খুনের তদন্তে গঠিত ইনকোয়্যারি কমিশনের কাজও সন্তোষজনক বলে জানা যায়। শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখী করার প্রত্যয় পুর্নব্যক্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। অর্ন্তবর্তী সরকার এবং ছাত্র-জনতার অবস্থানে মৌলিক কোনো পরির্বতন ঘটেনি। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর মনোভাব এবং নির্বাচন নিয়ে তাড়াহুড়ার কারণে এক ধরণের মতভিন্নতার জন্ম হচ্ছে। এসব মতভিন্নতাকে পুঁজি করেই স্বৈরাচারের দোসররা ষড়যন্ত্রের ডালপালা বিস্তার করতে চাচ্ছে। কয়েকদিন আগে ছাত্র সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ্র একটি বক্তব্য নিয়ে বেশ তোলপাড় হয়েছে। তিনি বলেছিলেন, রাজনীতিবিদরা হাত মেলাচ্ছেন আর বিপ্লবীদের ফাঁসির দড়ি এগিয়ে আসছে। বক্তব্যটি খুব রূঢ় হলেও একেবারে অমূলক নয়। বিপ্লব ব্যর্থ হলে বিপ্লবীদের ভাগ্যের চরম পরিনতি অপেক্ষা করে। হাসনাত আব্দুল্লাহর সেই বক্তব্যকে ট্রল করে ঢাকার এক সময়ের সুখ্যাত এক গায়ক মাকসুদুল হক ফেইসবুকে যে ঘৃন্য মন্তব্য করেছেন, তা ছাত্র-জনতার মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। তার মন্তব্য থেকে অভ্যুত্থানের নায়কদের বিরুদ্ধে স্বৈরাচার হাসিনার দোসরদের তীব্র আক্রোশ ও জিঘাংসার প্রতিফলন ঘটেছে। পতিত স্বৈরাচারের দোসররা ছাত্র-জনতার বিপ্লবকে ব্যর্থ করে দিয়ে পুরনো বন্দোবস্তে ফিরে যাওয়ার নানামুখী চক্রান্তে লিপ্ত থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। নির্বাচন ও সংস্কার প্রশ্নে অর্ন্তবর্তী সরকারকে সময়ের অস্পষ্টতা পরিহার করতে হবে। অন্যদিকে উপদেষ্টা ও ছাত্র সমন্বয়কদেরকেও বক্তব্য প্রদানের ক্ষেত্রে আরো সতর্ক থাকতে হবে। ফ্যাসিবাদের ভুক্তভোগী এবং অভ্যুত্থান সফল করার নেপথ্যে থাকা রাজনৈতিক পক্ষগুলোর মধ্যকার ঐক্যে ফাঁটল, সমন্বয়হীনতা ও কিংবা যে কোনো ভুল বুঝাবুঝির কারণেই কেবল পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের ষড়যন্ত্র সফল হতে পারে। অর্ন্তবর্তী সরকারের কাছে ছাত্র-জনতা ও সাধারণ মানুষের উচ্চ প্রত্যাশার বিপরীতে সরকারের কাজের ধীরগতি এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে অমনোযোগিতা ও ব্যর্থতা এ ক্ষেত্রে ভয়ঙ্কর পরিনতি ডেকে আনতে পারে। গত কয়েক দিনে ঢাকার কয়েকটি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন নতুন ইস্যু সৃষ্টি করে উত্তেজনা সৃষ্টির অপপ্রয়াস দেখা গেছে। তিতুমির কলেজ এবং সিটি কলেজ সাইন্সল্যাব এলাকায় রাস্তা অবরোধ ও সংর্ঘষের ঘটনাগুলোকে অগ্রাহ্য করার সুযোগ নেই। দেশের একনম্বর লুটেরা কর্পোরেট অলিগার্ক এস আলম সিঙ্গাপুরে বসে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মামলার হুমকি দিচ্ছে। শেখ হাসিনার ফোনালাপ উস্কানি অব্যাহত রয়েছে। অতএব ছাত্র-জনতা ও রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষমতার প্রতিযোগিতা ও আপসের পথ পরিহার করে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে চুড়ান্ত রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক বিজয় নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন অব্যাহত রাখতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
কুরস্কে ৪০ শতাংশ এলাকার দখল হারিয়েছে ইউক্রেন
আমরা জমিদার নই,মানুষের পাহারাদার : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
জর্ডানে ইসরাইলি দূতাবাসের কাছে গুলি, বন্দুকধারী নিহত
ট্রাম্পের জয়ের পর ইলন মাস্কের সম্পদ বাড়ছে রকেট গতিতে
ভয়াবহ তুষারঝড়ে বিপর্যস্ত যুক্তরাজ্য, বহু ফ্লাইট বাতিল
ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত আরও ১২০ ফিলিস্তিনি
ইভেন্টের সেরা লড়াইটি উপহার দিলেন আফরা-সানজিদা
ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান পাহাড়ের পর জয়-জাকিরকে হারিয়ে চাপে বাংলাদেশ
নাটকীয় শেষ দশ মিনিটে দুই গোল শোধ করে বার্সাকে রুখে দিল সেল্তা
বিবর্ণ সিটিকে ইতিহাদেই বিধ্বস্ত করলো টটেনহ্যাম
নটিংহ্যামকে হারিয়ে চার ম্যাচের জয়খরা কাটালো আর্সেনাল
স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা জাতীয়করণের দাবী অত্যন্ত যৌক্তিক
পাঠ্যবই ছাপায় অনিয়মে আনন্দ প্রিন্টার্সকে সতর্কতা
দক্ষিণ লেবাননে ৬ চিকিৎসাকর্মী নিহত
জনগণের সাথে জনসংযোগ বাড়াতে হবে
আমরা যুদ্ধে বিশ্বাসী না কেউ গায়ে পড়লে জবাবের প্রস্তুতি রাখতে হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
বাফুফের নতুন সভাপতি তাবিথের কাছে ২৭ রেফারির চিঠি
ফের বাড়লো সোনার দাম, ভরি ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা
বাংলাদেশে খেলা নিয়ে অনিশ্চিয়তায় হামজা!
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামেই হবে অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফের খেলা